আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।সেদিন ছিল অমাবস্যা, মঙ্গলবার, ভাদ্রমাস।সারাদিন ধরে ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ছে।রাতেও আকাশটা ভারী।থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। খেয়েদেয়ে বেশ তাড়াতাড়ি করেই ঘুমিয়ে পড়লাম।গভীর রাতে হঠাৎ করে মনে হলো কিসের শব্দ হচ্ছে। আমাদের ঘরটা তখন টিনের।ঘরের পাটাতনটা বাঁশের।আমাদের খাট সোজা বেশটা ফাঁকা যাতে মই দিয়ে পাটাতনে উঠা যায়।মা এটাসেটা পাটাতনের উপর রাখে।আমিও মাঝে মধ্যে ওখানে উঠি।বেশ দোতলা দোতলা ভাব মনে হয়। মাকে ডেকে বললাম, দ্যাখতো কিসের শব্দ হচ্ছে মা।মা ঘুমের ঘরে বললেন,দ্যাখ তোর বিড়ালেরা মারামারি করছে কিনা।এখানে বলা দরকার আমার বিড়াল ৪টা এবং তাদের আলাদা নামও আছে।আমাকে সবাই বিড়ালের মা বলে ডাকতো।দেখি সেগুলো আমার পাশে শুয়ে আছে।মাকে বললাম,ওরা তো সব আমার কাছে।মা জড়ানো কন্ঠে কি বলল বুঝতে পারলাম না।কিন্তু আমার ঘুম আসছেনা।শব্দ গুলো আরও ভারি হতে লাগল।একবার ভাবলাম মনে হয় চোর এসেছে। আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে। ছোট বেলা থেকে আমি প্রচন্ড সাহসী। সাহস করে একাই বিছানা থেকে নামলাম।হঠাৎ করে মনে হলো আমার চুলগুলো ধরে কেউ টেনে উঠাচ্ছে। আমার হাতপা ঠান্ডা হয়ে গেল।ভয়ে ভয়ে লাইটের সুইচটা টিপে লাইট জ্বালালাম।দেখি ভয়ংকর কালো একটা উলঙ্গ লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর খিক খিক করে হাসছে।হাতদুটো লম্বা।গায়ের রং অসম্ভব কালো।আমার গলা থেকে আর কথা বেরোচ্ছে না।শুধুই গোঙানির শব্দ হচ্ছে। ইতিমধ্যে মা উঠে গেছে। তারপর আর মনে নেই। সকাল হলে কোথাও কোন চিহ্ন দেখতে পেলামনা।বাবা ভাত খেয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে গেল সে নাকি জ্বিন চালান দিতে পারে।বাবা গেলেই লোকটা নিজেই রাতের সব ঘটনা খুলে বলল।বাবা তো অবাক।সে বলল তোমার মেয়ের জন্য আজ সবাই বেঁচে গেলে।জানিনা সেদিন আদৌ কি এসেছিল।তবে ঘটনাটি মোটেও মিথ্যা ছিলনা।সেদিনের কথা ভাবলে আজও ভয়ে গা কাঁটা দেয়, চোখদুটো ছানা বড়া হয়ে যায়।
সেই রাতের গল্প _ মমতা পাল
সেই রাতের গল্প
মমতা পাল
( সত্য কাহিনী অবলম্বনে)
Post a Comment