অশ্লীলতা
- ছোট্ট একটু ব্যবচ্ছেদ
❑
পর্ব
– ৫ / শেষ পর্ব
নির্মলেন্দু
গুণের একটি প্রিয় বিষয় দেহ ও দেহানুষঙ্গ। তিনি কপট নন। তাই অকপটে নিজের বিশ্বাস ও কল্পনা
প্রকাশ করেন। কিন্তু কখনো, কখনো তা নারীকে প্রয়োজনীয় সম্মানের পক্ষে আপত্তিজনক। যেমন,
তিনি যখন লেখেন:
‘রান্নাঘর
থেকে টেনে এনে স্তনগুচ্ছে চুমু খাও তাকে,
বাথরুমে
ভেজানো দরোজা ঠেলে অনায়াসে ঢুকে যাও-
সে
যেখানে নগ্ন দেহে গানার্র্থেই তৈরি হয়ে আছে
আলোকিত
দুপুরের কাছে-, মনে রেখো,
তোমার
রাত্রি নেই, অন্ধকার বলে কিছু নেই।
বিবাহিত
মানুষের কিছু নেই একমাত্র যত্রতত্র স্ত্রীশয্যা ছাড়া।’
-স্ত্রী
তখন,
অশ্লীলতার চূড়ান্তে পৌঁছেও কবিতার স্বার্থে তা হজম করা যায়। কিন্তু নির্মলেন্দু গুণ
যখন লেখেন নিচের পঙ্ক্তিগুলো, তখন?
‘যেমন
প্রত্যহ মানুষ ঘরের দরোজা খুলেই
দেখে
নেয় সবকিছু ঠিক আছে কিনা, তেমনি প্রত্যহ
শাড়ির
দরোজা খুলে স্ত্রীকেও উলঙ্গ করে
দেখে
নিতে হয়, ভালো করে দেখে নিতে হয়:
-জঙ্ঘায়,
নিতম্বে কিংবা সংরক্ষিত যোনির ভিতরে
অপরের
কামনার কোনো কিছু চিহ্ন আছে কিনা।’
-
‘স্ত্রী’
কবিতাটি
কবির ১৯৭২ সালে প্রকাশিত না প্রেমিক না বিপ্লবী কাব্যগ্রন্থভুক্ত। তার মানে, গুণের
কবিতায় কাম শুরু থেকেই ছিল। ২০০০ সালে বেরিয়েছে বাৎসায়ন, এর পর কামগন্ধী বহু কবিতা
মিলিয়ে বের করেন কামকানন (২০০৭)। কেন কামের রাজ্যে বসবাস?- এক সাক্ষাৎকারে (প্রথম আলো
: ২২শে জুন, ২০০৭) নির্মলেন্দু গুণ জানিয়েছেন: ‘আমি [নির্মলেন্দু গুণ] কিছুটা সচেতনভাবেও
করেছি বলা যায়। আমি ভেবেছি, কামকেন্দ্রিক কবিতার ধারাটিকে আরও প্রবল করে উপস্থাপন করি।
নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় প্রেম-কাম-রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে- এটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য।
নারীর স্তনাগ্র-চূড়ায় তাঁর বিশ্ব কেঁপে ওঠে।
তিনি
লিখলেন :
‘আমার
অন্তিম চুম্বনের জন্য আমি
তোমার
নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে তখন
প্রসারিত
করবো আমার অধরোষ্ঠ।
ঝর্নার
উচ্ছল জলের দিকে যেরকম
তৃষিত
গ্রীবাকে প্রসারিত করে উষ্ট্র।
তোমার
বাম চোখে আমি পান করব
এক
লক্ষ ক্যান ঠাণ্ডা জার্মান বিয়ার,
ডান
চোখে লক্ষ পেগ স্কচ হুইস্কি।’
-চুম্বন-স্তবক
এক
সময় কামকে কাব্যের বড় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আমাদের পূর্বপুরুষরা সেটা চেষ্টা
করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি কামকে কতটা শিল্পরূপ দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এ চেষ্টা এখনও
অব্যাহত আছে। প্রেম তো যৌনতারই একটি সংস্কৃত প্রকাশ।’ (মহুয়া : নির্মলেন্দু গুণ সংখ্যা
: ২০০৮)।
কবি
নির্মলেন্দু গুণ উপলব্ধি করেছেন নর-নারী সম্পর্কের আদি ও মৌলিক উৎসটি এখনও শরীর। ‘বাৎসায়ন’
কাব্যটি তাঁর এই মানবিক বোধের সতেজ প্রস্ফুটন। তিনি পুরুষ হিসেবে নারীর শরীরের প্রতিটি
গিরিগুহাকে, প্রতিটি স্পর্শকে, প্রতিটি আলিঙ্গনকে, প্রতিটি শীৎকারকে প্রবল প্রাণ প্রবণতায়
উপভোগ করেছেন। পুরুষ নির্মলেন্দু এক কাব্যের অধ্যবসায়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন নারীর
শরীর ও কামসূত্রকে। তাঁর কবিমন ও ‘কাব্যকাম কুশলতা’আশ্রয় পেয়েছে শরীর মন্থনে। তিনি
জানেন মানুষের সর্বোচ্চ আনন্দের অনুভূতি ও জ্ঞানের উপলব্ধি ঘটে এই শরীর বিনিময়েই।
তাই
তিনিই বলতে পারেন-
“আনন্দের
শ্রেষ্ঠ উৎস হচ্ছে কাম।
কাম
থেকে জন্ম নিয়েছে কবি।”
জীবনচেতনার
সামগ্রিক উপলব্ধির শীর্ষে দাঁড়িয়ে কবি বুঝেছেন-
“যখন
আমি নগ্ন হই
তখনই
আমি কবি।”
“আমি
যাই, আমি ছুটে যাই; আমি
কামভিখিরির
মত কপর্দকশূন্য করপুটে
তোমার
অগ্নির টানে ছুটে যাই, হাওয়া।”
তারপরও
তিনি নিশ্চিত নন, তাঁর অন্বেষণ গন্তব্যে পৌঁছাবে কি না।
তিনি
মনে করেন-
“কাম
নিয়ে আমি যত সাধনা করেছি,
শ্রী
অমর্ত্য সেনও মনে হয় না তত।
এই
কাজে আমি যত শ্রম দিয়েছি,
তত
শ্রম ষ্টেশনের কুলিও দেবে না।
তারপরও
আমার কাটে না সংশয়,
আমার
কি হয়? কোনো কিছু হয়?”
প্রকৃতিপ্রেমী
কবি প্রকৃতির মাঝেই বারবার খুঁজে পান তাঁর কামচরিতার্থতা। প্রকৃতি ক্রমাগত কামসুলভ
আনন্দ আহ্বান নিয়ে তাঁর সামনে নিজেকে উন্মোচন করে-
“রাত্রি
হচ্ছে একটি কামার্ত কালো মেয়ে”
নিজেকে
লুকিয়ে না রেখে তিনি অকপটে বর্ণনা করেন তাঁর পুনর্জন্মের কথামালা-
“বর্ষা
ছিল পাকতে-শুরু ডাঁসা ভুবির স্তনে,
দিন-দুপুরে
আঁধার করা যোগীশাসন বনে।
বর্ষা
ছিল ধান-ডোবানো মাঠ-ভাসানো জলে,
সাঁতার
কাঁটা বুনো হাঁসের কামার্ত দঙ্গলে।
তাদের
কাছেই চিনেছিলাম তেপান্তরের মাঠ,
তারাই
আমায় দিয়েছিল কামশাস্ত্রের পাঠ।
কামকলাতে
এই যে আমার একটু বাহাদুরি,
বর্ষাবালার
কাছ থেকে তা করেছিলাম চুরি।”
জীবনপ্রেমী
কবি জানেন তাঁর কবিমনের গতিপথ। এ মানসবোধে কামজ অনুভূতির মূল্য এবং ভূমিকা অনেক বেশি।
একারণে নিজেকে হাতের মুঠোয় তুলে ধরতে তাঁর কোনো দ্বিধা নেই।
“সেই
আমাকে অধিক পায়,
যে
আমাকে কামের চুলায়
কাঠের
মতো পুড়িতে দেয়।….
সেই
আমাকে অধিক পায়,
যে
আমাকে নাড়ায় না।
যে
আমাকে স্বাধীন রাখে
সে
আমাকে হারায় না।”
শৈশবে
মাকে হারিয়ে কবি বঞ্চিত হয়েছেন স্তনদুগ্ধসুধা পানে। স্তনতৃষ্ণা তাঁর মন থেকে কখনো মুছে
যায়নি-
“আমার
স্তনস্তবমুখরিত কবিতায়, তাই
দুগ্ধবতী
নারীরা হয়েছে আমার ঈশ্বরী”
তিনি
নারীর বুকের পুষ্পযুগলের অপরূপ শোভা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। বিকশিত পুষ্পদ্বয়ের গভীরে
প্রাণরূপ মধু ও কামরূপ শক্তির যে বিরাট খনি লুকিয়ে আছে তার সৌন্দর্য দেখে মোহিত হয়েছেন।
কামশাস্ত্রজ্ঞ
যে কবি বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে-
“দেখিলেন
সেই অপরূপ শোভা,
মনোলোভা,
নিদ্রিতা, নিশ্চুপ।”
সেই
তিনিই দেখেছেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো সুডৌল পুস্পকলি দুটি প্রস্ফুটনের জন্য অপেক্ষা
করে পুরুষ আঙ্গুলের সামান্য স্পর্শের, আর তারপরেই ঘটে যায় মহাবিস্ফোরণ-
“অসতর্ক
পুরুষ-আঙুলের
সামান্য
আঘাতে বিভাজিত হল
পরমাণু,
বিস্ফোরিত হল বোমা।”
তাঁর
সমস্ত কাব্যসাধনা, কাব্যযশ এবং ‘কাব্যকাম কুশলতা’র প্রধান উৎস কাম। সমকালীন বাস্তববিমুখ
মানুষের কাছে তা অপরিচিত হলেও প্রেমিক কবি চণ্ডীদাশ ও বাৎসায়নকে অনুধাবন করে তিনি জেনে
নিয়েছেন পরম সত্যটিকে-
“তাঁরই
কল্যাণে নারীকে চিনেছি,
শিখেছি
সঙ্গম কলা, রতিরঙ্গরস;
তা
না হলে সকলি গরল ভেল,
কামসিদ্ধি
বিনা ব্যর্থ কাব্যযশ।”
নাকি
দেহ মনেরই প্রকাশ?”
এই
অমীমাংসিত প্রশ্ন বাৎসায়নের মতো নির্মলেন্দু গুণকেও বিক্ষত করেছে জীবনভর। অবশেষে উত্তীর্ণ
যৌবনে কবি পেয়েছেন সত্যের সন্ধান।
“বুঝেছেন
মন বড় সত্য নয়
মানবের
দেহই প্রধান।”
নারীর
নূপুরশিকলে বাঁধা পড়ে গেছেন চিরকালের মতো। তবে এ নিয়ে তাঁর মনে কোনো খেদ নেই। বরং বারবার
তিনি অনুভব করতে চান নারীর অগ্নিশরীর।
“আমার
কাছে অগ্নির চেয়েও
উষ্ণ
মনে হয়েছিল নারীকে।
তাই
আমাকে বরফ-রাতে
নারীর
তাতে পুড়িয়েছিলাম।
আমার
কাছে লোহার চেয়েও
ভারী
মনে হয়েছিল নারীকে,
তবুও
তাকে শিবের মতোন
মাথায়
তুলে ঘুরিয়েছিলাম।”
একালে
মানুষ ভেঙ্গে বহুধাবিভক্ত হয়ে গেছে। কখনো পশুবৃত্তি কখনো কবিতাবৃত্তি কখনো স্বার্থমুখী
কখনো বৃক্ষমুখী অর্থাৎ এক মহাকালিক স্ববিরোধিতা মানুষকে অনেকাংশেই মানবেতর প্রাণীতে
পরিণত করেছে। কৃত্রিম জৌলুষ ও চাকচিক্যতেই মানুষ এখন আচ্ছন্ন। যা মোটেও মানুষের মানবিক
বোধের সচেতন প্রকাশ ঘটায়না। মানুষের এই সামগ্রিক স্ববিরোধিতায় কবি মনে করেন-
“মানুষকে
কখনোই আমার
শ্রেষ্ঠ
প্রাণী মনে হয়নি।
আমি
মানুষের চেয়ে বেশি
ভালোবাসি
হাঁসের সঙ্গম।”
তাই
বলে কবি মানুষের মাঝেই বারবার খুঁজেছেন মানুষের মানবিক মনুষ্যত্ব।
“অনিবৃত্ত
কামের অগ্নিতে
যখন
ডালির জেব্রার মতো
ঝলসে
গিয়েছে এই দেহ,
তখন
গণিকার পদতলেই
আমি
খুঁজে পেয়েছিলাম
আমার
বেহেশ্ত।”
এবং
তিনি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেন-
“মাঝে-মাঝে
আমি ভাবি, ভাবি
আমার
কাব্যকামকুশলতা নিয়ে
এই
যে আমি গর্ব করে চলেছি,
আমার
কি আদৌ কিছু হচ্ছে?”
‘বাৎসায়ন’
গ্রন্থের প্রথমেই তিনি নিজের ভিতরে,মানুষের ভিতরে খুঁজেছেন, খুঁজতে বলেছেন গভীর ও গোপন
সেই অনুভূতিটিকে যে অনুভূতি মানুষকে জাগিয়ে রাখে জীবনভর, মানুষকে উপলব্ধি করায় জীবিত
বলে। বুঝতে চেয়েছেন মানুষ হিসাবে আমাদের আগ্রহ, দায়িত্ব, কর্তব্য ও উদ্দেশ্যকে। যা
তিনি পেয়েছেন তাই আসলে সমগ্ররূপ ধারণ করেছে তাঁর সামগ্রিক
‘কাব্যকাম
কুশলতা’য়।কালব্যাপী নিরন্তর অন্বেষণে তাঁর সামনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি মাত্র
প্রধান প্রশ্ন-
“ভিতরে
তোমার ঘুমাচ্ছে না, কে?
জীবনবিচ্যুত
জড়ের মৌনতা,
না
কি সুখ-বুদ্ধি চতুর যৌনতা?
অনুসন্ধান
কর, অনুসন্ধান কর।”
চলুন
এবারে কবি সাইয়েদ জামিলের গল্প শুনি। তিনি জীবনানন্দ দাস সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত
২০১৫ সালে। যখন কোন কবিতার সমালোচনা করা হয় তখন তার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে
কথা বলা অর্থহীন। তিনি কবিতার মাধ্যমে কি বলতে চেয়েছেন, কবিতা হিসেবে কতটুকু সার্থক
রচনা করলেন এসবই মূল আলোচনা হওয়া উচিত।
সাইয়েদ
জামিলের কবিতারর কিছু নমুনা দেখি -
''পৃথিবীতে
আমরা গান গাই
পক্ষী
শিকার করি,
চোদাচুদি
করি, এবং নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করি ''
আমরা
এসবই করি, ভুল কিছু নেই। আর একটা কবিতায় তিনি লিখেছেন,
''স্বেচ্ছায়
শাড়ি খুলে শ্রীমতি কাদম্বরী আমার
মুখের
ভেতর পুরে দিলো
তার
অহংকারী দুধের বোঁটা। দুপা ফাঁক
করে
ঊরুসন্ধি দেখিয়ে বললো,
'ও
নব্য ঠাকুরপো, এ শরীর তোমারও'
আমি
মুসলমানের পোলা, আমার ঘেন্না হল।
তবু
আমি কাদম্বরীর সাথে রতিক্রিয়া সম্পন্ন করলাম ''
কবি
এখানে কাদম্বরীর সাথে রতিক্রিয়ার এক অন্যায় ভাবনা প্রকাশ করেছেন। কাদম্বরী কোন প্রেম
কামের দেবী নয়, নয় কবির প্রেমিকা। তাই এরকম ভাবনা আসলে বিকৃত বাসনা। দ্বিতীয়ত এখানে
' আমি মুসলমানের পোলা ' কথাটি চরমমাত্রার সাম্প্রদায়িকতা, যা নিন্দনীয়।
দ্যা
স্পিরিট অব ইসলাম নামক কবিতায় লিখেছেন,
''আমি
গুরু চোদা জামিল।
সুতরাং
রবীন্দ্রনাথকে পাল্টা থাপড়াইতে দ্বিধা করিলাম না।
এবং
মাদারচোত বলিয়া গালিও দিলাম।
তারপর
পোস্টারের সেই রবীন্দ্রনাথরে ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন
করে
কমোডে ফেলে তার উপর মুত্র
বিসর্জন
করিলাম এবং ফ্ল্যাশ আউট
করিয়া
গৃহ হইতে ঠাকুর তাড়ায়া দিলাম ''
❑
মেহেদী
হাসান
তামিম
0 Comments